এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর সমালোচনা করলেন কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ জাফর আলম। তাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না দিয়ে অন্যজনকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়ায় তার প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলে দাবী করেন জাফর আলম। তিনি বলেন ট্রাকের মধ্যে নৌকাকে উঠিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নেওয়া হবে। এর মাধ্য্মে আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
১৯ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কক্সবাজারের পেকুয়ায় নির্বাচনী সভায় বক্তব্যের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি মুহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে।
এদিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কক্সবাজারের পেকুয়ায় নির্বাচনী অফিস কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বর্তমান সাংসদ জাফর আলম তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বক্তব্য দেওয়ায় তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, দলের মনোনয়ন না পেয়ে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট করছেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান সাংসদ জাফর আলম। ১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় পেকুয়ায় নিজের সমর্থনে আয়োজিত এক সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে জাফর আলম আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আমি একবার মনোনয়ন পেয়েছি কিন্তু আমি শতবার মৃত্যুর মুখে আপনার জন্য গিয়েছি। আমি আপনার জন্য আমার জীবনে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছি। আমি কক্সবাজারে এক মিটিংয়ে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা খরচ করেছি। আপনাদের থ্রি-স্টার হোটেলে রেখেছি। মাতারবাড়িতে ৪০ হাজার মানুষকে একদিনের খাবার দিয়ে এক হাজার ট্রাক গাড়ি দিয়ে আমি জনসভাকে সফল করেছি। আপনি (শেখ হাসিনা) সেখানে ঘোষণা করলেন আশেক উল্লাহ রফিক এমপি প্রার্থী।
এমপি জাফর প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে আরও বলেন, শোনেন নেত্রী-আল্লাহ উপরে আছেন। আমি দোষ করলে আল্লাহ আমার বিচার করবেন, কিন্তু আমি মনে করেছি এটা আমার প্রতি অবিচার হয়েছে। আমার মতো একজন সহজ-সরল কর্মীকে, আমাকে বারবার ঠকিয়ে আরেকজনের কাঁধে নৌকা দিয়ে আমার কাছ থেকে নৌকা কেড়ে নিয়েছিলেন। সেদিনও আমি হাসি মুখে মেনে নিয়েছি। জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাকে ভোট দিতে না পেরে নেতাকর্মীরা চোখের জল ফেলে চলে গেছেন। সেদিনও আমি আপনার কথা শুনেছি।
এমপি জাফর আলম বলেন, এখন আপনি বলেছেন, সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র ভোট করতে পারবেন। আমি স্বতন্ত্র ভোট করছি। আমরা চকরিয়ার মানুষ। শহীদ আব্দুল হামিদের চকরিয়া, আবুল কালামের চকরিয়া, পেকুয়া এটা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চকরিয়া। এখানে কোনো অন্যায় আমরা বরদাশত করব না, করব না, করব না।
জাফর আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘আমার চেয়ে নৌকাকে ভালোবাসে এমন কে আছে। দিনে নৌকা, রাতে বিএনপি, কার টেলিফোন রিসিভ কর, কার জায়গা দখল কর। সব আমার কাছে খবর আছে। আমাকে পেকুয়ার ভোট দেবেন কি দেবেন না সেটি আপনাদের ব্যাপার। চাঁদাবাজা, দখলবাজ এগুলো চলবে না চলবে না চলবে না। সোজা কথা।
নিজের অবস্থান তুলে ধরে জাফর বলেন, আল্লাহর রহমত ছাড়া আমাকে রোখার সাধ্য নাই কারো। আমার মার্কা ট্রাক, কেন ট্রাক নিয়েছি, নৌকার অবস্থা বেশি খারাপ। নৌকাকে ট্রাকে তুলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে বলব, ট্রাক মনে করিয়েন না আপা, এটা নৌকা। আমি আপনার জাফর।
জাফর আলম আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী একদিন বলতেন ‘আমার জাফর’। কেন জানি না, কোন কালো ইশারায় আমি আপনার পর হয়ে গেলাম।
এব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বর্তমান সাংসদ জাফর আলম প্রায় সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের চেতনা ও আদর্শিক নেত্রী। তিনি এই এধরনের বির্তকিত বক্তব্য দিয়ে নেতাকর্মীদের অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
মাতামুহুরী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহসিন বাবুল বলেন, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান সাংসদ জাফর আলম প্রধানমন্ত্রীকে হুমকিস্বরূপ বক্তব্য দিয়ে নির্বাচনকে বির্তকিত করতে চাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার বক্তব্য কোনভাবে মেনে নিতে পারবে না। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
পাঠকের মতামত